মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৮ অপরাহ্ন
মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ ২০ মার্চ রবিবার জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। দুপুর ২ টায় ম্যাচটি শুরু হবে। এই ম্যাচেও কী সবার অবদানে জেতা যাবে? জিতলেই যে সিরিজ জয়ের ইতিহাসও গড়া হয়ে যাবে। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ।
আমরা সিরিজটি জিততে পারি : তামিম ইকবাল
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যে কোন সংস্করনে প্রথমবারের মতো হারানো গেছে। প্রথম ওয়ানডেতে ৩৮ রানে জয় পাওয়া গেছে। অরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ম্যাচ সেরা হলেও অধিনায়ক তামিম ইকবালের দৃষ্টিতে সবার অবদানে ইতিহাস গড়া জয়টি এসেছে। তাতে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও কী সবার অবদানে জিতে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?
টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০’র র্যাংকিংয়ে সেরা পাঁচে থাকা কোন দলকে প্রথমবারের মতো তাদের মাটিতে সিরিজে হারানোর ইতিহাস গড়ার হাতছানি
প্রথম ওয়ানডেতে ডুসেনকে আউট করার পর তাসকিনের আনন্দ, এই আউটেই বাংলাদেশের মুঠোয় আসে ম্যাচ, জয়ও মিলে
শুধু তাই নয়, টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০’র র্যাংকিংয়ে সেরা পাঁচে থাকা কোন দলকে প্রথমবারের মতো তাদের মাটিতে হারানোর ইতিহাসও গড়বে বাংলাদেশ। এরআগে জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কোন দলই সেরা পাঁচে ছিল না। কিন্তু এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মতো সেরা দল প্রতিপক্ষ। এই দলকে সিরিজে হারাতে পারলে তো সেরা সাফল্যই মিলবে। ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে সিরিজে হারানো গেছে। এবার তাদের মাটিতে হারানোর আশা করা হচ্ছে। এই সাফল্য প্রথম ওয়ানডের ধারাবাহিকতায় এখন আসলেই হয়ে যায়। সবার অবদানে মিললেই হয়ে যায়। ঐক্যবদ্ধ নৈপুন্য ছাড়া যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো কঠিন।
প্রথম ওয়ানডের পর সাকিব আল হাসান, ডেভিড মিলার ও কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোপ্রথম ওয়ানডের পর সাকিব আল হাসান, ডেভিড মিলার ও বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো
প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং করে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান করে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা সংগ্রহ দাড়ায়। শুরুতে তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস মিলে ৯৫ রানের জুটি গড়েন। এই জুটি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তামিম রান পাচ্ছিলেন না। ৪১ রানের ইনিংস উপহার দেন। এরপর লিটন ৫০ রান করে আউট হন। চতুর্থ উইকেটে সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির আলী রাব্বি মিলে তো ১১৫ রানের জুটি গড়েন। যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেরা জুটি হয়। শতরানের প্রথম জুটিও হয়।
সাকিব ৭৭ রান করেন। ৫০তম হাফসেঞ্চুরি করেন। সাথে রাব্বিও ৫০ রান করেন। শেষে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (২৫), মেহেদি হাসান মিরাজ (১৯*), আফিফ হোসেন ধ্রুব (১৭) ও তাসকিন আহমেদও (৭*) অবদান রাখেন। মিরাজ তো শেষে ২ ছক্কা হাকিয়ে রানকে দ্রুতই ৩১০ রানের উপরে নিয়ে যান।
‘কমপ্লিট টিম উইন বাই এভরিওয়ান’
ব্যাটিংয়ে সবাই অবদান রাখেন। বোলিংয়েও দেখা যায় ঐক্যবদ্ধ নৈপুন্যই মিলে। শুরুতে শরিফুল ইসলাম আঘাত হানেন। এরপর তাসকিন আহমেদ টানা দুটি উইকেট তুলে নেন। তাতে করে ৩৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর টে¤॥^া বাভুমা ও ভ্যান ডার ডুসেন যখন শতরানের জুটির কাছে চলে যান, তখন বাভুমাকে থামান শরিফুল। ৮৫ রানের বড় জুটি হতে দেননি। ব্রেক থ্রু এনে দেন। আতঙ্ক তৈরী করেছিলেন ডুসেন। সেঞ্চুরির কাছাকাছিও চলে যাচ্ছিলেন। ম্যাচও মুঠোয় নিয়ে ফেলছিলেন। ৮৬ রান করা ডুসেনকে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচ নিয়ন্ত্রনে আনেন তাসকিন। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে অসাধারণ এক ক্যাচ ধরেন রাব্বি। ম্যাচ এখানেই আসলে ঘুরে যায়।
এরপরও ভয় থাকে। ডেভিড মিলার যে ছক্কা-চার হাকাতে থাকেন। রান আর বলের মধ্যে পার্থক্য কমাতে থাকেন। সেই মিলারকে ৭৯ রানের বেশি করতে দেননি মিরাজ। দলের ২৪২ রানে মিলারকে আউট করেই ম্যাচ জয় নিশ্চিতের পথে নিয়ে যান মিরাজ। এরআগে আরও ৩টি উইকেট শিকার করেন। শেষ ৫ উইকেটের চারটিই নেন মিরাজ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিংটাও করেন। নিজেই অধিনায়ক তামিমের কাছ থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বোলিং চেয়ে নেন। আত্মবিশ্বাসের সাথে ম্যাচ জিতিয়েও দেন। শেষে রিয়াদ এসে একটি উইকেট নিয়ে ম্যাচ জয় নিশ্চিত করেন। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৭৬ রানের উপরে করতে দেয় না বাংলাদেশ।
‘পেসাররা যেভাবে বোলিং করেছে এক কথায় রোমাঞ্চকর’
প্রথম ওয়ানডে জেতার পর বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমে কোচদের আনন্দ
সবার যে অবদান কতটা, তা তামিমের কণ্ঠেই পরিস্কার। তিনি বলেছেন, ‘কমপ্লিট টিম উইন বাই এভরিওয়ান। আমার কাছে মনে হয় এটা কমপ্লিট গেম বাই এভরিওয়ান। এখানে সবার অবদান ছিল। ব্যাটিংয়ে আমাদের ভালো একটা উদ্বোধনী জুটি হয়। সাকিব ব্রিলিয়ান্ট ইনিংস খেলেছে। ইয়াসিরের ইনিংসটি অবিশ্বাস্য। রিয়াদ ভাইয়ের ছোট ২৫ রান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আফিফের একটি চার ও একটি ছক্কা এবং মিরাজের দুইটি ছক্কাও সমান গুরুত্বের ছিল। একজন পয়েন্ট আউট করতে পারবো না যে ওর কারণেই জিতেছি। এটা এমন ম্যাচ ছিল যেখানে সবাই অবদান রেখেছে। সবারই। ভালো ফিল্ডিং হয়েছে। ব্যাটিং, বোলিং হয়েছে। সব কিছুর দিক থেকে খুব খুশি।’
সাথে যোগ করেন, ‘বোলিংয়ে আমরা যখনই শুরুতে উইকেট পাই বুঝতে পারছিলাম যে আমরা ম্যাচে আছি। কিন্তু এই মাঠ এমন যেখানে তিনশ রানও তাড়া করা যায়। কিন্তু পেসাররা যেভাবে বোলিং করেছে এক কথায় রোমাঞ্চকর। মিরাজ যেভাবে ফিরে এসেছে তা দারুণ ছিল।’
‘প্রতিটি সুযোগ আমাদের গ্রহণ করতে হবে’
প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় স্ক্রিনে লেখা উঠল
সেঞ্চুরিয়নে জিতে এখন সিরিজ জয়ের হাতছানি দিচ্ছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। তামিম বলেছেন, ‘আমরা সিরিজটি জিততে পারি। এজন্য প্রতিটি সুযোগ আমাদের গ্রহণ করতে হবে। কারণ তারা শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে চাইবে।’ সিরিজ জয় হয়ে গেলে জি¤॥^াবুয়ে, কেনিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর বাংলাদেশের কাছে চতুর্থ দল হিসেবে নিজ মাটিতে হারবে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই সাথে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারানোর ইতিহাস গড়াও হয়ে যাবে।